কাশিয়ানী (গোপালগঞ্জ) প্রতিনিধি: গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীতে কয়েক কোটি টাকার সরকারি জমি দখল করে অবৈধ ইটভাটা করার অভিযোগ উঠেছে।
নড়াইলের লোহাগড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান বদর খন্দকার ও তার ভাই বাবর খন্দকারের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ উঠেছে।
কাশিয়ানী উপজেলার কালনা ফেরিঘাট এলাকায় দীর্ঘ ৮ বছরে ধরে ‘মা-বাবা ব্রিকস’ নামে অবৈধভাবে ভাটাটির কার্যক্রম চলছে।
এ ভাটা বন্ধের দাবিতে গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসক ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা।
অভিযোগে জানা গেছে, লোহাগড়া উপজেলার প্রভাবশালী বাবর খন্দকার ও তার ছোট ভাই লোহাগড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান বদর খন্দকার ক্ষমতায় থাকাবস্থায় প্রভাব খাটিয়ে কাশিয়ানী উপজেলার চর জাজিরা কালনা মৌজায় ১০ একর সরকারি খাস জমি দখল করে পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি ছাড়াই অবৈধভাবে গড়ে তুলেছেন ইটভাটা।
পরিবেশ অধিদপ্তর কর্তৃক অভিযান চালিয়ে ভাটার কার্যক্রম বন্ধ করে দিলেও অদৃশ্য ক্ষমতাবলে আবারও ভাটার কার্যক্রম চলছে।
জনবসতি এলাকায় গড়ে উঠা এ ভাটায় ব্যারেল চিমনী ব্যবহার ও জ্বালানি হিসেবে কাঠ ব্যবহার করায় এলাকার স্বাভাবিক পরিবেশ ব্যাহত হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আশপাশের ফসলি জমি ও কৃষকেরা।
ইট পোড়ানো (নিয়ন্ত্রণ) সংশোধন আইন-২০১০ এর ৪৫৬ উপ-ধারা মতে, আবাসিক এলাকা, উপজেলা সদর, ফলের বাগান, ফসলি জমি, বনাঞ্চল, লোকালয় ও জনবসতি এলাকার ৩ কিলোমিটারের মধ্যে ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না।
অথচ সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, উপজেলার কালনা-নড়াইল মহাসড়কের পাশেই জনবসতি এলাকায় ও কৃষি জমিতে ইটভাটা স্থাপন করে প্রশাসনের নাকের ডগায় ব্যারেল চিমনির ব্যবহার করে পোড়ানো হচ্ছে ইট। ভাটার পাশে রয়েছে ফসলি জমি। ১শ’ গজের মধ্যে রয়েছে জনবসতি, মহাসড়ক, স্কুল, মসজিদ, মাদ্রাসা, দোকানপাট ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানসমূহ।
এছাড়া প্রভাবশালী বাবর খন্দকার ও বদর খন্দকারের বিরুদ্ধে এলাকার নিরীহ কৃষকদের ভয়ভীতি দেখিয়ে কৃষি জমি মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে লীজ গ্রহণ এবং জোরপূর্বক ভাটার আওতায় নেয়ার অভিযোগ রয়েছে।
২০১৬ সালের ডিসেম্বরে পরিবেশ অধিদপ্তর কর্তৃক জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে অভিযান চালিয়ে মা-বাবা ব্রিকসকে ৫০ হাজার টাকা জরিমাণা এবং ভাটার সকল কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হয়।
চর কালনা গ্রামের মো. ফরিদ বলেন, ‘কৃষি জমির পাশে ইটভাটা স্থাপন করায় জমিতে সঠিকভাবে ফসল হচ্ছে না। ইটভাটার মালিক স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় তার বিরুদ্ধে এলাকার কেউ কিছু বলতে সাহস পাচ্ছে না।’
চর কালনা গ্রামের কৃষক সাঈদ, বাদশা মোল্যা, ইবাদুল, শাহিদুল, বাচ্চু মোল্যাসহ একাধিক কৃষক অভিযোগ করে বলেন, ‘ফসলি জমি ঘেঁষে সরকারি জায়গায় অবৈধভাবে গড়ে উঠা ইটভাটা ফসলের মারাত্মক ক্ষতি করছে। এ ভাটা বন্ধ করতে আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’
লোহাগড়া ইউপি চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘ভাটার মালিক বদর খন্দকার লোহাগড়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান। এ পরিচয়ের জোরেই তিনি সরকারি সম্পত্তি দখল করেছেন। তার ইটভাটার কোনো অনুমোদনও নেই। অথচ তিনি সরকারি জমিতেই ইটভাটা স্থাপন করেছেন। যা এলাকার স্বার্থে বন্ধ করে দেয়া উচিত।’
পরিবেশ অধিদপ্তরের কোন ধরণের অনুমতি ছাড়াই ইটভাটা পরিচালনা করছেন স্বীকার করে বদর খন্দকার বলেন, ‘আমি কোন খাস জমি দখল করেনি। স্থানীয় কৃষকদের কাছ থেকে ৩ পাখি (বিঘা) জমি ১৬ বছরের জন্য লীজ নিয়ে ভাটা করেছি। স্থানীয় রাজনৈতিক দ্বন্দের কারণে আমাদের ব্যবসায়ীক ক্ষতি করার জন্য একটি মহল ষড়যন্ত্র করছে।’
পরিবেশবাদী বেসরকারী সংস্থা বাংলাদেশ সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড স্টাডিজ (বিসিএএস) এর গবেষক বিধান টিকাদার বলেন, ‘জনবসতিপূর্ণ এলাকায় ইটভাটা স্থাপন করায় ওই এলাকার পরিবেশ বিপর্যয়ের আশংকা রয়েছে।’
কাশিয়ানী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ রসময় মন্ডল বলেন, ‘কৃষি জমির পাশে ইটভাটা স্থাপনা করা ঠিক নয়। এতে ফসল উৎপাদন মারাত্মক হ্রাস পায়।’
কাশিয়ানী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ, এস, এম মাঈন উদ্দিন বলেন, ‘দু’বছর আগে ভাটাটির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিল। তবে আবারও নিয়মবহির্ভূতভাবে ভাটার কার্যক্রম চললে অভিযান চালানো এবং আইনগত ব্যবস্থা নেয় হবে।’